Ticker

20/recent/ticker-posts

মানবদেহে রক্তের ভূমিকা কী?(What is the role of blood in the human body?)


রক্ত একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ তরল দিয়ে গঠিত যা প্লাজমা বা রক্তরস নামে পরিচিত।রক্ত হচ্ছে অস্বচ্ছ মৃদু ক্ষারীয় এবং লবণাক্ত তরল পদার্থ।রক্তরসে ভাসমান অবস্থায় কোষীয় উপাদান গুলো যেমন শেত রক্তকণিকা,লোহিত কণিকা ও অনুচক্রিকা থাকে।একটি পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানবদেহে প্রায় 5 থেকে 6 লিটার রক্ত থাকে,যা দেহের মোট ওজনের 7- 8%।মানুষের রক্তের পি এইচ এর মাত্রা 7.35-7.45 থাকে এবং তাপমাত্রা 98.4 ডিগ্রি ফারেনহাইট।রক্তের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানির চেয়ে বেশি।হেপারিন নামক পদার্থের কারণে মানবদেহের রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না।স্বাভাবিকভাবে দেহে কোথাও কেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে 4 মিনিট সময় লাগে।

রক্তের উপাদান
রক্তে দুই ধরনের উপাদান থাকে।
1.রক্তরস 55 %
2.রক্তকণিকা 45%
রক্তরস-রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশকে রক্ত রস বলা হয়।রক্ত রস তরল কঠিন পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত।এতে তরল পদার্থের পরিমাণ 90 থেকে 92% এবং কঠিন পদার্থের পরিমাণ 8 থেকে 10%।রক্তরসে বিভিন্ন উপাদান থাকে যেমন-এলবুমিন,ইউরিয়া,ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি।
রক্ত রসের কাজ-
1.টিস্যু থেকে যেসব বর্জ্যপদার্থ বের হয় তা রেশনের জন্য বৃক্ক কে নিয়ে যায়।
2.রক্তরস রক্তের অম্ল ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।
3.রক্ত জমাট বাঁধার প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো পরিবহন করে।
4.পরিপাকের পর খাদ্য সার রক্ত রসে দ্রবীভূত হয়ে দেহের বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গে বাহিত হয়।
5.লোহিত কণিকায় সংবদ্ধ হওয়ার আগে অক্সিজেন প্রথম রক্ত রাশি দ্রবীভূত হয়।

রক্তকণিকা
রক্তের উপাদান হিসেবে ভাসমান বিভিন্ন কোষকে রক্তকণিকা বলা হয়।হারের লাল অস্থিমজ্জাতে রক্ত কণিতা জন্ম হয়।রক্তকণিকাশ তিন ধরনের হয়ে থাকে।
1.লোহিত রক্তকণিকা-মানবদেহের রক্ত রসের ভাসমান দি- অবতল চাকতির মতো হিমোগ্লোবিনযুক্ত লাল বর্ণের কণিকাকে লোহিত রক্তকণিকা বলে।মানুষের রক্তে লোহিত কণিকা সঞ্চিত থাকে প্লীহাতে।
লোহিত রক্ত কণিকার কাজ-
1.রক্তের ঘনত্ব ও আঠালো ভাব রক্ষা করে।
2.রক্তের আয়নিক ভারসাম্য অব্যাহত রাখে।
3.লোহিত রক্তকণিকার রক্তে বিলিভার্টিন ও বিলিরুবিন ,উৎপন্ন করে।
4.লোহিত রক্তকণিকা রক্তের ঘনত্ব ও আঠালো ভাব রক্ষা করে

শ্বেতরক্ত কণিকা-
শেতো রক্তকণিকা হিমোগ্লোবিন বিহীন,অনিয়তাকার, ও নিউক্লিয়ার যুক্ত বড় কোষ।কোন রঞ্জক পদার্থ থাকে না বলে এদেরকে শেতো রক্ত কণিকা বলে।এই রক্তকণিকা কম থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।এটি জীবাণুকে ধ্বংস করে।
শ্বেতরক্ত কণিকার কাজ-
1.মনোসাইটো ও নিউট্রোফিল হ্যাঁগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণুর ভক্ষণ করে।
2.নিউট্রোফিলের বিষাক্ত দানা জীবাণু ধ্বংস করে।
3.দানাদার লিওকোসাইট হিস্টামিন সৃষ্টি করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

অনুচক্রিকা
অনুচক্রিকা সাইটোপ্লাজম দানাদার এবং সাইটোপ্লাজমিক কোষ অঙ্গাণু এবং মাইট্রোকন্ডিয়া গোলোগি বস্তু থাকে,কিন্তু নিউক্লিয়াসে থাকে না।অনুচক্রিকার প্রধান কাজ হল রক্ত জমাট বাঁধনে সাহায্য করা।
অনুচক্রিকার কাজ
1.অনুচক্রিকা রক্ত জমাট বিগোলনের সাহায্য করে থাকে।
2.রক্ত জমাট বাধাকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন ক্লোটিং ফ্যাক্টর ক্ষরণ করে।
3.স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ অনুচক্রিকা থাকলে রক্তনালীর ভিতরে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।

রক্তচাপ
রক্তচাপ মানুষের দুই ধরনের হয়ে থাকে,
1.সিস্টোলিক-হৃদপিন্ডের সংকোচন।
2.ডায়াস্টোলিক-হৃদপিন্ডের প্রসারণ।

রক্তের গ্রুপ
রক্তের গ্রুপ চারটি-A,B,AB,ও O।প্রত্যেক রক্তের গ্রুপ আবার দুভাগে বিভক্ত পজিটিভ এবং নেগেটিভ।এন্টিজেন এবং এন্টিবডির উপর ভিত্তি করে রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।রক্তের গ্রুপের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রক্তের আর এস ফ্যাক্টর।এই কারণে রক্তের গ্রুপের সাথে পজেটিভ বা নেগেটিভ শব্দটি বলা হয়ে থাকে।
তাই বলা যায় এই আট ধরনের রক্তের গ্রুপ আছে-
A+,A-,B+,B-,AB+,AB-,O+,O-,রক্তের গ্রুপ আবিষ্কার করেন কার্ল ল্যান্ডস্টিনার।রক্তের সার্বজনীন দাতা O গ্রুপ,আর সার্বজনীন গ্রহীতা AB গ্রুপ।

মানব শরীরে রক্তের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।রক্ত দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।হেপারিন এর কারনে মানব দেহের অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না।অনুচক্রিকা ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।



Post a Comment

1 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement