Ticker

20/recent/ticker-posts

বিষণ্ণতা(DEPRESSION)



ডিপ্রেশন হল একধরনের ইমোশনাল ইলনেস। আমরা সাধারণত মন খারাপকেই ডিপ্রেশন বলে থাকি। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞনে ডিপ্রেশন বলতে মন খারাপ থেকেও বেশি কিছু। ব্যাক্তির স্বাভাবিক অনুভূতি কিংবা মেজাজের অবনতিকেই মুলত ডিপ্রেশন বলে। এটাকে ‘মেজর ডিপ্রেসিভ ইলনেস’ও বলা হয়। এটা এক ধরণের মেন্টাল্লি ডিসর্ডার যা বিভিন্ন মাত্রায় হতে পারে। তবে ডিপ্রেশনের মানসিক অসুস্থতা আর মানষিক ভারসাম্যহীনতা এক নয়। আমরা প্রাত্যহিক জীবনে সবাই কম বেশি ডিপ্রেশনে ভুগে থাকি। গবেষনায় দেখা যায় প্রতি পাঁচ জনের এক জন জীবনের কোন না কোন সময়ে ডিপ্রেশনে ভুগে থাকে।যদিও ডিপ্রেশন একটি বায়োলজিক্যাল ইলনেস ভিত্তিক, মানসিক এবং সামাজিক কারণ এর পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
ডিপ্রেশন এক ধরণের আবেগজনিত মানসিক সমস্যা ধরা হয়। দুঃখবোধের মত সাধারণ আবেগ কোন ব্যাক্তিকে অযৌক্তিক, তীব্র ও দীর্ঘ সময়ব্যাপী ঘিরে থাকে তখন তার স্বাভাবিক জীবনযাপন, কর্মতৎপরতা ও পারস্পরিক সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করে, এবং ডিপ্রেশনের শুরু সুচনা হয়।ডিপ্রেশনের অনেক কারন হতে পারে। তার মধ্যে; পারিবারিক ও সম্পর্কের সমস্যা, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, একাকিত্ব, গর্ভকালীন ও প্রসবপরবর্তী সময়, বিবাহবিচ্ছেদ, প্রবাসজীবন, অভিবাসন, মাদকসেবন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কোন কোন সময় ডিপ্রেশন বিনা কারনেও হতে পারে। শরীর ও মনের ভেতর থেকে এক ধরণের ‘এন্ডোজেনাস’ ডিপ্রেশনের উৎপত্তি ‌‌৷ ডিপ্রেশনের লক্ষনীয় কারনগুলো হতে পারে- কমপক্ষে দুই সপ্তাহজুড়ে দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকা, কোনো কিছু করতে ভালো না লাগা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, হঠাৎ রেগে যাওয়া, আগে যেসব কাজ বা বিনোদন করতে ভালো লাগত এখন সেগুলো ভালো না লাগা, মনোযোগ কমে যাওয়া, ক্লান্তি বোধ করা,ঘুম না হওয়া,খেতে ইচ্ছে না করা, খিদে না থাকা,মনোযোগ কমে যাওয়া, সাধারণ বিষয় ভুলে যাওয়া, সব সময় মৃত্যুর চিন্তা করা, নিজেকে অপরাধী ভাবা, আত্মহত্যার চিন্তা ও চেষ্টা করা ইত্যাদি। এ ছাড়া কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না—এমন কিছু শারীরিক সমস্যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যেমন—মাথাব্যথা, মাথায় অস্বস্তি, মাথা-শরীর-হাত-পা জ্বালা করা, গলার কাছে কিছু আটকে থাকা, শরীরব্যথা, ঘাড়ব্যথা, গিঁটে গিঁটে ব্যথা, বুক জ্বালা, বুকব্যথা, নিঃশ্বাসে কষ্ট ইত্যাদি। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসব শারীরিক সমস্যার কারণ পাওয়া যায় না। নিজেকে খুব ছোট মনে হতে পারে, উৎসাহ-উদ্দীপনা কমে যায়, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং কোনো কোনোএসব লক্ষণের সব কটি একসঙ্গে একজনের মধ্যে সব সময় থাকবে না আবার কয়েকটি লক্ষণ থাকলেই ধরে নেওয়া যাবে না যে কারও মধ্যে বিষণ্নতা সৃষ্টি হয়েছে। নির্ণয়ের জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন সাইকোথেরাপি৷ রাতারাতি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এরকম ভাবাটা সম্পুর্ণ ভুল। এর জন্য যথেষ্ট সময় ও ধৈর্য দুই’ই প্রয়োজন। আবার অনেকেই মনে করেন শুধুমাত্র মনোবিজ্ঞানীর দ্বারা সাইকোথেরাপির মাধ্যমেই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, এটা মোটেও ঠিক নয়। গবেষনায় দেখা গেছে; শুধুমাত্র সাইকোথেরাপির মাধ্যমে ডিপ্রেশনে কোন পরিবর্তন আসেনা তবে ডিপ্রেশনরোধী ঔষধের মাধ্যমে ডিপ্রেশন থেকে আংশিক ফল পাওয়া যায় । পুরোপুরি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে ঔষধ এবং সাইকোথেরাপি দুটাই প্রয়োজন।


Post a Comment

2 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement