এক সময় প্রায় বিলুপ্ত ছিল রাসেল ভাইপার সাপ। যা বর্তমান সময়ে এক আতঙ্কের নাম। চলতি বছরই এ সাপের কামড়ে দশ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশব্যাপী এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অধিকাংশ জেলায় মিলেছে এর অস্তিত্ব।
রাসেল ভাইপার সাপের বৈশিষ্ট্য :-
প্রথমে দেখলে রাসেল ভাইপার সাপটি অনেকটা অজগর সাপের বাচ্চার মত মনে হয়। যে কারণে অনেকেই প্রথম দেখার সময় ভুল করে। কিন্তু এই সাপটি ছোট ও সরু আকৃতির হয় এদের দৈর্ঘ্য ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এদের শরীরে বাদামী গোল গোল দাগ থাকে, এদের মাথা চ্যাপ্টা ও ত্রিভুজাকার।দৈহিক বৈশিষ্ট্য ও রং এর কারনে এরা শুকনো পাতা বা পাকা ধানক্ষেতের মাঝে খুব সহজে লুকিয়ে থাকতে পারে। যার ফলে অনেক মানুষই তাদের চিনে উঠতে পারে না এবং ছোবলের শিকার হয়। রাসেল ভাইপার সাপ আমাদের দেশে অনেকেই চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামে চিনে থাকে।
এই সাপের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা খুবই বিষধর। এই সাপের প্রবল থেকে এন্টিভেনোম দিলেও বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ২০%। এই সাপের অ্যান্টিভেনম বাংলাদেশে নাই। আরো ভয়ংকর ব্যাপার হলো, অন্য সাপ আক্রান্ত না হলে সাধারণত কাউকে আক্রমণ করে না বা ছোবল দেয় না বা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এই সাপের বেলা ঠিক বিপরীত অবস্থান নেয় এরা দূর থেকে মানুষ দেখলে তেরে আসে কামড় দেবার চেষ্টা করে।আক্রমণে এদের এত ক্ষিপ্রতা যে ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের একভাগ সময়ে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে ।এরা রেগে গেলে প্রচন্ড আকারের শব্দ করে কিছুটা প্রেশার কুকারের মত।
রাসেল ভাইপার সাপের বিষের বৈশিষ্ট্য :-
রাসেল ভাইপার সাপের বিষে হেমাটটোক্সিক থাকে যার কারণে আক্রান্ত স্থানে দ্রুত পচন ধরে। আক্রান্ত স্থান 5 মিনিটের মধ্যে ফুলে যায়। এরা বিনষ্ট করে দিতে পারে ফুসফুস,কিডনি ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। অন্যান্য সাপ সাধারণত একই ধরনের বিষ ধারণ করে কিন্তু এই সাপ একই সাথে ৫/৬ বিষ ধারণ করে। এরা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং একই সাথে ৬০ থেকে ৮০টি বাচ্চা দিতে পারে।
সাপে কামড়ালে করণীয় :-
* সাপে কামড়ালে আতঙ্কিত না হয়ে তাকে অভয় দিন। মানুষ সাপে কামড়ালে যা মারা যায় তার চেয়ে বেশি মারা যায় আতঙ্কিত হয়ে। ডায়াবেটিস রোগীদের সুগারের মাত্রা সাপে কামড়ালে আতঙ্কে বেড়ে যেতে পরে। তাই এ অবস্থায় রোগীকে কিছু খেতে দেওয়া উচিত নয়।
* সাপে কামড়ানো আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন যাতে ধুলাবালি না পড়ে।সাপে কাটা সাথে সাথে ব্যক্তির সাথে পড়ে থাকা ঘড়ি,বেল্ট এবং চেইন আংটি থাকলে খুলে ফেলুন। রোগীকে কাত হয়ে সোয়াবেন না সোজাসুজি রাখুন এবং হার্ট লেভেল থেকে আক্রান্ত স্থান নিচে রাখার চেষ্টা করুন।
* আক্রান্ত স্থান থেকে কোনভাবেই রক্ত বের করার চেষ্টা করবেন না। আক্রান্ত স্থানে ওষুধ লাগাবেন না। যতদূর সম্ভব পানি বা আয়োডিন দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন।
* হাতে বা পায়ে ছোবল দিলে তার উপরে দড়ি দিয়ে বাঁধতে হবে। তবে ২০ মিনিটের বেশি বেঁধে রাখা উচিত নয় এবং বেশি শক্ত করে বাধা ও উচিত নয়। এর ফলে রোগী পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
* সাপে কাটার পরে কোন অবস্থাতেই ঝাড়ফোকর বা কোন ওঝা কবিরাজ দেখাবেন না যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। একমাত্র চিকিৎসা দ্বারাই রোগীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুস্থ করা সম্ভব।
রাসেল ভাইপার সাপের থেকে বাঁচার উপায় :-
* রাসেল ভাইপারের উপস্থিতির সম্ভাবনা থাকলে, ঘর থেকে বের হবার সময় উঁচু বুট জুতা ও শক্ত প্যান্ট পরিধান করুন।
* বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।আশেপাশের ঝোপঝার বন জঙ্গল পরিষ্কার রাখুন যাতে বিষধর সাপ লুকাতে না পারে।
* রাতে বাইরে গেলে টর্চ লাইট বা আলো ব্যবহার করুন সাধারণত রাসেল ভাইপার সাপ রাতে সক্রিয় হয়।
* সব সময় সচেতন থাকার চেষ্টা করুন। যেহেতু মাঠের খেতে এই সাপের উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা যায় তাই কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন।
* বিপদের সময় দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।তাই স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।
রাসেল ভাইপের একটি বিষধর সাপ, এদের কামড়ে জীবন বিপন্ন হতে পারে। সচেতনতা এবং প্রাথমিক জ্ঞান থাকলে নিজেকে এবং অন্যদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। রাসেল ভাইপার সাপকে কোনভাবেই বিরক্ত করবেন না যতদূর সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলাই ভালো। সচেতনতা এবং সতর্কতায় রাসেল ভাইপের সাপের বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
0 Comments